শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি :
চলতি বছর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন মা-বাবা হারা দরিদ্র সাইমা জামান। সেই খবর গণমাধ্যমে আসার পর জানতে পারেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা। তিনি সাইমার লেখাপড়া সহজ করার উদ্যোগ নেন। তার কথামতো ব্যবস্থা নিয়েছেন মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। শনিবার তিনি পদ্মা তীরের চরাঞ্চলে সাইমাদের বাড়িতে যান। ভালো ফলের জন্য তিনি সাইমা ও তার বিধবা চাচি মিরজান বেগমসহ পরিবারের সদস্যদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার মল্লিককান্দি গ্রামের মরহুম পান্নু মল্লিকের সন্তান সাইমা জামান। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উপজেলার ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। বাবা পান্নু সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ২০০৯ সালে। তখন সাইমা ও তার যমজ বোন সিয়ামের বয়স তিন বছর। পরিবারটি ভাগ্যের চাক হঠাৎ উল্টো ঘুরতে শুরু করে। এর দুই মাস পর একমাত্র চাচা মিনু মল্লিকও মারা যান। যমজ বোনদের বয়স যখন পাঁচ বছর তখন মা চলে যান অন্যের ঘরে। বিধবা চাচি মিরজান বেগম তার ছোট দুই সন্তান ও সাইমা-সিয়ামকে নিয়ে শুরু করেন নতুন জীবন সংগ্রাম। চার বছর আগে মারা যান সাইমাদের বৃদ্ধ দাদাও। তবু থেমে যাননি চাচি মিরজান বেগম। নিজের সন্তানের মতোই বড় করতে থাকেন সাইমাদের।
সাইমা রাজারচর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে পান জিপিএ-৪.৮৯। ভর্তি হন কলেজে। চাচাতো ভাই মনজু মল্লিক ও চাচির সহায়তা ছাড়া কলেজে ভর্তি ছিল কল্পনাতীত। সাইমা গ্রামের খুদে শিক্ষার্থীদের মাসে ৩০০ টাকা বেতনে পড়িয়ে নিজের খরচ চালান; কলেজের খরচ চালান। অর্থের অভাবে নিয়মিত কলেজে যাওয়া হতো না তার। ভালো ফল করার পরও উচ্চশিক্ষার ব্যয় নিয়ে শঙ্কায় ছিল পরিবারটি। এই খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে নজরে আসে শেখ রেহানার। তিনি ব্যবস্থা নিতে বলেন চিফ হুইপ ও আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নূর-ই-আলম চৌধুরীকে। চিফ হুইপের নির্দেশে প্রতিনিধিরা সাইমাদের বাড়িতে মিষ্টি ও উপহারসামগ্রী নিয়ে যান। ঘর মেরামতের জন্য টিন ও নগদ টাকা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাজিবুল ইসলাম। পরে চিফ হুইপ নিজেও যান সাইমাদের বাড়ি।
চিফ হুইপ সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘জিপিএ-৫ অনেকেই পায়। কিন্তু সাইমার প্রাপ্তিটা অন্য রকম। ওর বাবাসহ অনেকে মারা যাওয়ার পরও ওর চাচির চেষ্টায় সে এই অর্জন করেছে। তাই অদম্য মেধাবী সাইমা ও ওর চাচিকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা ওর পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাকে বলেছেন। তাই আমি শুভেচ্ছা বিনিময় করে গেলাম। আমরা সব সময় দরিদ্র ও মেধাবীদের পাশে থাকি।’
এর আগেও চিফ হুইপ এসএসসি ও এএইচসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীর বাড়ি গিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন; বাড়ি মেরামত, বৃত্তি ও লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছেন। অদম্য সাইমা বলেন, ‘চিফ হুইপ স্যার আমাদের বাড়ি আসবেন এটা কোনো দিন ভাবিনি। আমরা মাননীয় চিফ হুইপ স্যারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমার লেখাপড়া যেখানে অনিশ্চিত ছিল সেখানে আর কোনো ভয় নেই।’ চাচি মিরজান বেগমও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এর চাইতে ভালো আর কী হতে পারে। আজকের দিনটা আমাদের জন্য গর্বের।’
এই ওয়েবসাইটের সকল স্বত্ব madaripursomoy.com কর্তৃক সংরক্ষিত