মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি :
মাদারীপুর সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা যুবক মিরাজ (ছদ্মনাম)। স্বপ্ন ছিল ইউরোপের দেশ ইতালি যাবেন। অভাব ঘুচবে পরিবারের। তবে সেই স্বপ্ন এখনো অধরা মিরাজের। উল্টো প্রাণনাশের আশঙ্কা করছেন তিনি।
বিভিন্ন ধাপে দালালদের ৪০ লাখ টাকা দিয়েও দুই বছর ধরে লিবিয়ায় বন্দি আছেন ওই যুবক (২৭)। এত টাকা জোগাড় করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবারটি। মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। থাকতে হচ্ছে অন্যের বাড়িতে। মাসে গুনতে হচ্ছে ৭০ হাজার টাকার কিস্তি। এ অবস্থায় আরও চার লাখ টাকা দাবি করেছেন লিবিয়ার দালালরা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যুবক মিরাজের বাবা অন্যের জমিতে বদলা (দিনমজুর) দিয়ে যা পান, তা দিয়েই চলে সংসার। দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মিরাজ মেজো। পরিবারের অভাব ঘোচাতে তিনি ইতালি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। একই ইউনিয়নের দালাল মো. শওকতের সঙ্গে সাড়ে চার লাখ টাকার চুক্তি করেন। এরপর প্রায় দুই বছর আগে চুক্তির টাকা পরিশোধ করে অবৈধভাবে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন মিরাজ। একই ইউনিয়নের আহসান (আসান) মুন্সির ছেলে লিবিয়ার দালাল সোহাগ মুন্সির কাছে যান। সেখানে যাওয়ার পর তাকে ‘গেম ঘরে’ (নির্দিষ্ট দেশে পাঠানোর আগে থাকার জায়গা) রাখা হয়। তবে তাকে ইতালিতে পাঠানো হয়নি। গত দুই বছর ধরে একবার পুলিশের কাছে বন্দি আবার গেম ঘরে এভাবেই চলছে ওই যুবকের জীবন।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, বিভিন্ন ধাপে এ পর্যন্ত ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন দালালরা। এ টাকা দিতে গিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে কয়েকজনের নামে টাকা লোন করা হয়েছে। সেখানে প্রতিমাসে ৭০ হাজার টাকা করে কিস্তি দিতে হচ্ছে। বিক্রি করতে হয়েছে নিজেদের থাকার শেষ সম্বল ঘরবাড়ি। এখন তাদের নিজেদের থাকার মতো কোনো ঘরও নেই। অন্যের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থায় মাসে ৭০ হাজার কিস্তির টাকা পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অথচ এরমধ্যেই ১৫ দিন আগে লিবিয়া থেকে আবার ফোন এসেছে, মিরাজকে পুলিশ ধরে গিয়ে গেছে। তাই তাকে ছাড়াতে সাড়ে চার লাখ টাকা লাগবে। একথা শোনার পর পুরো পরিবারটি ভেঙে পড়েছে।
কাঁদতে কাঁদতে ভুক্তভোগী মিরাজের মা বলেন, ‘দালালদের টাকা দিতে দিতে আমরা পুরো নিঃস্ব হয়ে গেছি। নিজেদের থাকার ঘরটাও বিক্রি করতে হয়েছে। বর্তমানে আমার দেবর আমাদের থাকতে দিয়েছে। সেখানেই থাকি। তারা তাড়িয়ে দিলে রাস্তায় থাকতে হবে। ব্র্যাক ব্যাংক থেকে নিজের নামে, মেয়ের নামে, প্রতিবেশী একজনের নামে টাকা লোন নেওয়া হয়েছে। তাতে মাসে ৭০ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হচ্ছে। মাসে এ কিস্তির টাকা শোধ করতে নতুন করে আবার লোন নিতে হচ্ছে। এখন আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে ওরা নির্যাতন করছে। তার শরীরে ঘা হয়ে গেছে। আমরা চাই যেকোনোভাবেই হোক আমার ছেলে যেন ইতালি যেতে পারে। ও যদি কোনো কারণে দেশে ফেরত আসে, তাহলে আমরা এ লোনের টাকা কীভাবে ফেরত দেবো? আমরা তো একেবারে শেষ হয়ে গেছি।’
প্রতিবেশী এক গৃহবধূ বলেন, ‘ওই ছেলেটি প্রায় দুই বছর ধরে লিবিয়ায় বন্দি আছে। এখান থেকে ওর পরিবার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দালালকে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছে। এমনকি তাদের থাকার জায়গা ও ঘরও বিক্রি করতে হয়েছে। তারপরও ইতালি যেতে পারছে না ছেলেটি।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ওয়েবসাইটের সকল স্বত্ব madaripursomoy.com কর্তৃক সংরক্ষিত
Leave a Reply