মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি :
মাদারীপুর নতুন বাস টার্মিনালে কথা হয় বাসচালক কাজী শরিফুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, জানি তিনদিন অবরোধ থাকবে। তারপরও কি করব বের হয়েছি শুধু পেটের জন্য, এসে দেখি যাত্রী নাই।
শফিকুল জানান তার পরিবার সাত সদস্যের। তিনি ছাড়া আর কেউ উপার্জন করার মতো নেই। দিনে যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চলে। গাড়ি বের করার জন্য তিনি টার্মিনালে সকাল ৬টা এসেছেন। কিন্তু সকাল গড়িয়ে যাচ্ছে। যাত্রী না থাকায় গাড়ি বের করতে পারছেন না তিনি। গাড়ির চাকা না ঘুরাতে পারলে রাতে চুলায় আগুন জ্বলবে কীভাবে এই চিন্তায় সময় কাটছে না তার।
মাদারীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে যাত্রী না থাকায় দূরপাল্লার কোনো বাস চলছে না। মাদারীপুরে তিন দিনের অবরোধের দ্বিতীয় দিন বুধবার (১ নভেম্বর) বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের তৎপরতা দেখা না গেলেও জরুরি কাজ ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হননি।
মাদারীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। যদিও অনেক পরিবহন শ্রমিক পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসে অপেক্ষায় আছেন যাত্রীর।
অবরোধে অফিস আদালত, ব্যাংক বিমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু আছে। তবে শহরে দোকান পাট খোলা থাকলেও দোকানদারদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে। কম দূরত্বে যাত্রীরা অটোরিকশা, ভটভটি ও মোটরসাইকেল, রিকশায় যাতায়াত করছেন।
শহরে বেশ কয়েকটি বাসের কাউন্টার ঘুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবরোধের কারণে যাত্রীরা টিকিট কাটছেন না। এ জন্য তারা কাউন্টার খুলে অবসর সময় পার করছেন।
অটোরিকশাচালক আবদুল লতিফ বলেন, ঘরে বসে থাকলে কেউ খাবার দিয়ে যাবে না, সাপ্তাহিক কিস্তি আছে বারোশ টাকা। এছাড়া পরিবারের খরচ তো আর বন্ধ থাকছে না। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খেটে ২০০ টাকা পেয়েছি। বের হয়ে এখনও লোক পাইনি। রাস্তায় লোকজন কম যাতায়াত করছে।
কেন্দ্রীয় টার্মিনালের মাদারীপুর পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. বেলায়েত বলেন, সরকারই বলুক আর প্রশাসন বলুক, যাত্রী ছাড়া তো খালি গাড়ি ছাড়তে পারব না। একটা গাড়ি চলতে খরচ আছে। সকাল থেকে কাউন্টারে বসে আছি। দুপুর ১২টা বেজে গেল একটি টিকিট বিক্রি করতে পারিনি। কেউ কোনো টিকিট বিক্রি করতে পারেনি।
মাদারীপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো.রনি খান বলেন, ‘বেশ কিছু দিন আগ থেকে এমনিতে অর্ধেক গাড়ি টার্মিনাল থেকে চলাচল করছে। তার মধ্যে অবরোধ। যাত্রীরা ঘর থেকে বের হচ্ছে না। যাত্রী ছাড়া তো গাড়ি চলতে পারে না। অনেক শ্রমিক এসে বসে আছে। আমরা গাড়ি ছাড়ার জন্যও প্রস্তুত। কিন্তু যাত্রী ছাড়া খালি গাড়ি তো ছাড়তে পারি না। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সরকার ও বিরোধী দলকে সমাঝোতায় আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
সোনালী পরিবহনের হেল্পার সাইদুল জানান, গাড়ি চললে আমাদের পেট চলবে, গাড়ি না চললে আমাদের পেট চলবে না পুরো সংসারটা নির্ভরশীল। এখন মালিক সমিতি যে সিদ্ধান্ত নেয় ওই সিদ্ধান্তে আমরা অটল।
আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি তুচ্ছ খন্দকার বলেন, হরতাল হোক আর যা-ই হোক আমরা ব্যবসায়ী। আমাদের কাজ হলো পরিবহন সচল রাখা। বাকিটা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করছে। এখন পর্যন্ত আমরা মাদারীপুর জেলা থেকে কোনো ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধ রাখা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।
এদিকে সকাল থেকেই মাদারীপুর শহরের বিভিন্নস্হানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বেশ সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। এব্যাপারে মাদারীপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম সালাউদ্দিন আহমেদ বলছেন, জনগণের জানমালের ক্ষতি হয় এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না।
এই ওয়েবসাইটের সকল স্বত্ব madaripursomoy.com কর্তৃক সংরক্ষিত
Leave a Reply