নিজস্ব প্রতিবেদক | মাদারীপুরসময় ডটকম
রাত পোহালেই ১ নভেম্বর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। প্রথমদিন আন্ত:নগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ঢাকায় ছেড়ে যাবে। পরেরদিন যুক্ত হবে আন্ত:নগর বেনাপোল এক্সপ্রেস । এছাড়াও মধুমতি এক্সপ্রেস ও নকশিকাথা এক্সপ্রেস দুটি এরুটে চলাচলের সিদ্ধান্ত হলেও তারিখ নির্ধারন হয়নি। রেল চলাচলকে ঘিরে প্রস্তুত করা হয়েছে এপাড়ের ভাঙ্গা স্টেশন,শিবচর স্টেশন ও পদ্মা স্টেশন। করা হয়েছে লোকবল নিয়োগ। শোভন চেয়ারে ভাঙ্গা থেকে ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে ২শ৩৫ টাকা। এদিকে ট্রেন যুগে পদার্পন করায় খুশি পদ্মা পাড়ের মানুষ।
সরেজমিন একাধিক সূত্রে জানা যায়, ১ নভেম্বর থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস খুলনা থেকে রাত ৯.৪৫ মিনিটে ছেড়ে ভোর ৫.১০ মিনিটে ঢাকা পৌছবে, আবার সকাল ৮.১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে বেলা ৩.৫০ মিনিটে খুলনা পৌছবে। ২ নভেম্বর থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস বেনাপোল থেকে দুপুর ১ টায় ছেড়ে রাত ৮.৪৫ মিনিটে ঢাকা পৌছবে, আবার রাত ১১.৩৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে সকাল ৭.২০ মিনিটে বেনাপোল পৌছবে। এদুটি ট্রেন ভাঙ্গার পর আর কোন স্টেশনে থামবে না। এদুটি ট্রেনের শোভন চেয়ারে ভাড়া ধরা হয়েছে ২শ৩৫ টাকা,এসি ৪শ৫০ টাকা, ফরিদপুর থেকে ঢাকা এই দুই শ্রেনীতে যথাক্রমে ২শ৬৫ টাকা ও ৫শ১২ টাকা। খুলনা থেকে ঢাকা এই দুই শ্রেনীতে ৫শ টাকা ও ৯শ৫৫ টাকা এবং এসি বাথ শ্রেনীতে প্রতিজন যাত্রীকে গুনতে হবে ১৭শ২০ টাকা করে।
এছাড়া নতুন সময়সূচি কার্যকর হওয়ার পর মধুমতি এক্সপ্রেস রাজশাহী থেকে সকাল ৬.৪০ মিনিটে ছেড়ে দুপুর ২ টায় ঢাকা পৌছবে, আবার বেলা ৩ টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে রাত ১০.৪০ মিনিটে রাজশাহী পৌছবে। নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে রাত ১১.৩০ মিনিটে ছেড়ে সকাল ১০.১০ মিনিটে ঢাকা পৌছবে, আবার বেলা ১১.৪০ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে রাত ১০.২০ মিনিটে খুলনা পৌছবে। ১ লা নভেম্বর থেকে আন্ত:নগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও ২ নভেম্বর থেকে আন্ত:নগর বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলের সকল কার্যক্রম গ্রহন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পর্যায়ক্রমে পদ্মা সেতু দিয়ে রাজশাহী হতে মধুমতি এক্সপ্রেস, খুলনা হতে নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস ও ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে কমিউটার ট্রেন পরিচালনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক মো: কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত ২৫ অক্টোবর-২০২৩ তারিখের এক প্রজ্ঞাপনে জানা যায়।
উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর এরুটে ট্রেন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্যবসায়ী শ্যামল চক্রবর্ত্তী বলেন, ট্রেন চালু হওয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এখন থেকে আমার মত ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ে বেনাপোল, যশোরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পন্য আমদানী ও রপ্তানী করতে পারবো। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবো। তবে ট্রেনের ভাড়া আরেকটু কমানোর দাবী করছি।
স্থানীয় মনির হোসেন বলেন, ট্রেন চালুর ফলে আমাদের এলাকার শিক্ষার্থীরাও এখন বাড়ি থেকে ঢাকা গিয়ে ক্লাস করে বাড়ি আসতে পারবে। তবে ট্রেনের ভাড়া অনেক বেশি। এই ভাড়া যদি কমানো হয় তাহলে সবাই ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবো।
ভাঙ্গা রেল স্টেশন সহকারী স্টেশন মাস্টার জিল্লূর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে খুলনাগামী যে ট্রেন যমুনা সেতু হয়ে চলাচল করতো সেটি এখন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করবে। ১ নভেম্বর থেকে একটি ট্রেন ঢাকা টু খুলনা ও ২ নভেম্বর থেকে আরেকটি ট্রেন একই রুটে চলাচল করবে। পরবর্তীতে আরো কয়েকটি ট্রেন চলাচল করবে তবে তার সিডিউল এখনো পাওয়া যায়নি। পুন:নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী ট্রেনে যাত্রী সেবা দেয়া হবে। আর ট্রেন চালুর খবরে মানুষের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎফুল্ল দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মাওয়া ভাঙ্গা সেকশন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ বলেন, সাধারন মানুষের ট্রেনে চলাচলের জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতমধ্যেই অনলাইনে টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথমে একটি ট্রেন খুলনা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে, ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা যাবে। সেটিই আবার ফেরত আসবে। ভাঙ্গাসহ আমাদের সকল স্টেশনগুলোই প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভাঙ্গা, শিবচর, পদ্মা, মাওয়া স্টেশনে স্টেশন মাস্টার নিয়োগ করা হয়েছে। সিকিউরিটি পুলিশও নিয়োজিত রয়েছে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ মারুফুর রশীদ বলেন, এই ট্রেন চালুর ফলে আমাদের অথনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যপক উন্নয়ন হবে। আমাদের বার্ষিক জিডিপিতে ৩.৫ শতাংশেরও বেশি অবদান থাকবে। আমাদের দক্ষিনাঞ্চলের ২১ টি জেলায় ইড্রাস্ট্রি ও অর্থনৈতিক দিকে ব্যাপক অগ্রগতি হবে। এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এই পদ্মা সেতু রেল সংযোগের কারনে বাংলাদেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ক্ষেত্রেও সক্ষমতা অনেক গুন বৃদ্ধি পাবে। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি উন্নয়নের জন্য এবং এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই পদ্মা সেতু রেল প্রকল্প এবংপদ্মা সেতু রেল লিংক ব্যাপকভাবে ইতিবাচক সাড়া ফেলবে বলে আমি মনে করি।
এই ওয়েবসাইটের সকল স্বত্ব madaripursomoy.com কর্তৃক সংরক্ষিত
Leave a Reply