এস.এম. দেলোয়ার হোসাইন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধিতে ১২ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ মাছ শিকার, পরিবহন, মজুত ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে সেটি অমান্য করে বিভিন্ন স্থানে মা ইলিশ শিকারে নামছেন জেলেরা। নদীর তীরে হাট বসিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেই ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে।
ঢিলেঢালা অভিযানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে পদ্ম নদীতে মা ইলিশ মাছ শিকার করছেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার নদী পাড়ের জেলেরা। নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরার সরকারি এ অভিযান তেমন কার্যকর হচ্ছে না।
রোববার (২৯ অক্টোবর) পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক দিন ঘুরে প্রকাশ্যে ইলিশ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ যেন উৎসব মূখর পরিবেশে শিকার ও বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। মাছ ধরে ট্রলার তীরে নোঙর করার আগেই জেলেরা জনগণের কাছে বিক্রি করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বন্দরখোলা, মাদবরের চর, চরজানাজাত, কাঠাল বাড়ি ইউনিয়নের নদীতে প্রতিনিয়ত জেলেরা ইলিশ মাছ শিকারে ব্যস্ত রয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন বা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে ঢিলেঢালা অভিযানের সুযোগে ইলিশের প্রজনন মৌসুমেও মাছ নিধন করা হচ্ছে। তারা কম দামে ডিমওয়ালা মা ইলিশ মাছ কিনে নিজ নিজ গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন। এ মাছের বেশির ভাগ ক্রেতা শিবচরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন। এলাকার অনেকেই ইলিশ কিনে শুধু নিজের ফ্রিজই ভরছেন না, সেই সাথে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে পাঠাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রশাসনের ঢিলেঢালা অভিযানে সরকারি টাকা খরচ হলেও অভিযান তেমন কার্যকর হচ্ছে না। নামমাত্র অভিযানে কৌশল পাল্টে জেলেরা প্রতিনিয়ত ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে।
জেলেরা বলেন, নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিকে নদীতে তেমন ইলিশ পাওয়া যায়নি। কিন্তু সপ্তাহখানেক হলো প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। পদ্মা পাড়ে একরকম হাট বসিয়ে ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, বছরে একবার নদীতে ইলিশ আসে। এসময় সবাই ইলিশ ধরে তাই আমরাও ধরছি। পেটের দায়ে মাছ ধরি। প্রশাসনের লোক এলে দ্রুত নদীর কিনারে গিয়ে আত্মগোপনে থাকি। এ বছর নদীতে তেমন অভিযান নেই বলেই ইলিশ মাছ ধরার সাহস পাচ্ছি।
বন্দরখোলা ইউনিয়নের পদ্মা পাড় কাজিরশুরা এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। আর এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ দেড় হাজার থেকে দুই হাজার বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও ছোট বড় মিলিয়ে এক সাথে দাম করে ক্রয় করছেন ক্রেতারা। একটু কম দামে ইলিশ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন স্থানীয় ক্রেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, শুনেছি বন্দরখোলার কাজিরশুরা এলাকায় কম দামে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। ভেঙে ভেঙে এই এলাকায় এসেছি কিছু মাছ কিনলাম। এখানে এসে দেখি এ যেন উৎসব মূখর পরিবেশে বিক্রি হচ্ছে মা ইলিশ। তবে মাছের দাম বেশি মনে হচ্ছে। যে পরিমাণে কম হওয়ার কথা, সেই পরিমাণে কম পাচ্ছি না। প্রশাসনেরও ভয় আছে। তবু মাছ কিনলাম।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৬ দিনে পদ্মা নদীতে অভিযান চালিয়ে ৩৩ টি মোবাইল কোর্ট অভিযান করে প্রায় ১৪ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া ৭২ টি মামলায় ১০২ জনকে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান ও ১০ জনকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়।
শিবচর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস ইবনে রহিম বলেন, প্রতিনিয়ত পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বিশাল এই পদ্মা নদীতে অভিযান চালিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করা সম্ভব নয়, যদি জেলেরা সচেতন না হয়। আমরা চেষ্টা করছি জেলেদের সচেতন করার। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি, যে মা মাছ না ধরলে ইলিশের উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ওই মাছ জেলেরাই ধরে বিক্রি করতে পারবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের শুরু থেকেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শেষ মুহুর্তে ইলিশ একটু বেশি ধরা পরছে, একারণে আমাদের অভিযান আরও জোড়ালো ভাবে পরিচালনা হচ্ছে। এই অভিযানে বিভিন্ন ভাবে ১০২ জনকে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এই ওয়েবসাইটের সকল স্বত্ব madaripursomoy.com কর্তৃক সংরক্ষিত
Leave a Reply