মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
মাদারীপুরে দর্জি কাজ শেখানো শেষে দেড় হাজার নারীর কাছ থেকে সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা বলে অন্তত ৫০ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে করতোয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচয়দানকারী একটি প্রতারকচক্র। এই ঘটনায় বিচার চেয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক ভুক্তভোগী নারী। এদিকে অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১০ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার ঘটমাঝি, দুধখালী, মধ্য খাগদী, পাকদি, হাউসদিসহ বিভিন্ন গ্রামের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর মাঝে লিফলেট বিতরণ করে একটি চক্র। পরে মাইকিং করে বিদ্যালয় এলাকার নারীদের দর্জির কাজ শেখার আহবান জানানো হয়। প্রথমে সদস্য ফি ১০০ টাকা ও বই কেনার জন্য ৫০০ টাকা করে নেয় জামাল উদ্দিন সরদার ও নাহিদ নামে করতোয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচয়দানকারী দুই ব্যক্তি। এরপর কয়েকদিন কাজ শিখিয়ে সেলাই মেশিন দেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় প্রতারকচক্রটি।
অন্যদিকে চরমুগরিয়া এলাকার কোহিনুর বেগমের বাসায় দুইমাস থাকলেও ভাড়া না দিয়েই চলে যায় বগুড়ার জামাল ও আর চাপাইনবাবগঞ্জের নাহিদ নামের ওই দুই প্রতারক। শুধু সেলাই মেশিন প্রশিক্ষনের কার্যক্রমই নয়, বিদেশগামীদের প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ প্রদানসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বেছে নেয় প্রতারকচক্র। বিদ্যালয় ছুটি শেষে শিক্ষকদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তাদের এই কার্যক্রম চালানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে এমন কার্যক্রম করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্তরা।
ঘটমাঝি এলাকার ভুক্তভোগী রুনা বেগম বলেন, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর কাছে লিফলেট দিয়ে বলছে তোমাদের আম্মু, আপুরা যদি টেইলার্সের কাজ শিখে তাহলে স্কুলছুটির পর আসতে বলবে। প্রতিদিন দুপুর সাড়ে ৩টায় স্কুল ছুটির পর দর্জি ক্লাস হবে। প্রথমে সদস্য ফি হিসেবে একশ টাকা, পরে উপকরণ দেওয়ার কথা বলে ৫শ টাকা নেয়। উপকরণ দিয়ে আমাদের সঙ্গে বিশ্বাস অর্জণ করে। এরপর স্বলমূল্যে সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৩৮০০ টাকা নেয়। পরে পালিয়ে গেছে তারা।
সীমা আক্তার নামে এক আরেক ভুক্তভোগী বলেন, জামাল ও নাহিদ নামে দুইজন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আমাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। এখন ক্লাসে আসে না, আর মোবাইল করলে ধরে না। আমরা পরে বুঝতে পেরেছি এরা প্রতারক।
পাকদি এলাকার নুপুর আক্তার নামে একজন বলেন, আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নেয় জামাল। পরে সেলাই মেশিন না দিয়েই লাপাত্তা সে। বিচার চেয়ে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
মাদারীপুর পৌরসভার চরমুগরিয়া এলাকার কোহিনুর বেগম বলেন, আমার বাসায় জামাল ও নাহিদ নামে দুইজন ভাড়া থাকতো। দুই মাসের ভাড়া না দিয়ে তারা দুজনেই চলে গেছে। যাবার সময় আমাদের কাউকে বলেও যায়নি। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হলে, দিবে বলেও দেয়নি তারা।
মাদারীপুর সদরের জুলিও কুরি উচ্চ বিদ্যালয়ের পিয়ন আহসান খান বলেন, দুই থেকে তিনমাস এখানে ক্লাস নিবে এ কথা বলে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে রুম নেয় তারা। কিছুদিন দর্জির কাজ শিখিয়ে পালিয়ে গেছে প্রতারকচক্রটি।
মাদারীপুর সদরের ঘটমাঝি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ কৃষ্ণ রায় বলেন, আমাদের ওই প্রতারকরা বলেছে তাদের প্রতিষ্ঠান সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত। আমরা সরল বিশ্বাসে তাদের জায়গা দেই। পরে জানতে পারি এলাকার অনেকের টাকা নিয়ে তারা পালিয়ে গেছে। আমরা তাদের কাউকেই চিনি না। আগে পরিচয়ও ছিল না।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম খান বলেন, নারীদের সেলাই মেশিন দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে একটি প্রতারকচক্র। এই চক্রকে ধরতে থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতারকচক্রকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এই ওয়েবসাইটের সকল স্বত্ব madaripursomoy.com কর্তৃক সংরক্ষিত
Leave a Reply