মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি :
মাদারীপুর জেলার অন্যতম উপজেলা শিবচর। পদ্মা পাড়ের এই উপজেলাটি নানা কারণেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিচিত।
পদ্মা সেতু এবং এক্সপ্রেস হাইওয়ের কারণে শিবচর সারা দেশের মানুষের কাছে বিশেষ পরিচিতি পায়।
পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকা শিবচরবাসীর দোর গোড়ায় এখন। এবার যোগাযোগের আরেক দ্বার উন্মোচন হচ্ছে আগামী ১০ অক্টোবর। শিবচর থেকে সরাসরি রাজধানী ঢাকার রেল চলাচল শুরু হচ্ছে শিগগিরই। ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করছেন রেল চলাচলের।
এর পর সপ্তাহখানেকের মধ্যে সাধারণ যাত্রীরা ট্রেনে চড়ে রাজধানী ঢাকা যেতে পারবেন। এই ট্রেন চালু ঘিরে শিবচরবাসীর মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। রেল নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত শুধু দিন গুণতে থাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মা সেতুর জাজিরা উপজেলার কিছু অংশ পড়েই শিবচর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মধ্য দিয়ে রেল লাইনটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনের সঙ্গে গিয়ে মিশেছে। এক্সপ্রেসওয়ের পাশ দিয়েই ফসলি জমি, কারো বাড়ির আঙিনার কাছাকাছি দিয়ে সমান্তরালে বয়ে চলেছে রেল পথ। শিবচর উপজেলার মধ্যে রয়েছে পদ্মা ও শিবচর নামের দুটি স্টেশন। মূল সড়ক থেকে স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে প্রশস্ত পথ। ১০ তারিখ উদ্বোধনকে ঘিরে স্টেশনগুলোতে রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। করা হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাজসজ্জা।
রেললাইন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রতিদিনই ট্রেস চলে এখানে। ট্রেনের সাইরেন শুনলে চমকিত হই! ভাবি, বাড়ির কাছ থেকে ট্রেনে চড়ে ঢাকা যেতে পারবো। আবার উত্তরাঞ্চলের জেলাতেও যেতে পারবো। বিশেষ করে ঢাকা যাওয়ার ক্ষেত্রে এই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক সাশ্রয় হবে। যানজট এড়িয়ে নির্বিঘ্নে ঢাকা পৌঁছাতে পারবে। ‘
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলসংযোগ প্রকল্পের রেলপথে ৩২টি কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস, ১৩টি রেল সেতু রয়েছে। ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার রেলপথে পাথরবিহীন রেলপথ রয়েছে ১৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার ও ২৮ দশমিক ৯ কিলোমিটার রয়েছে পাথরযুক্ত। এই রেলপথে ১টি জংশন ও ৪টি স্টেশন রয়েছে।
শিবচরের পদ্মা স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মো. হায়দার আলী বলেন, বাড়ির কাছ থেকে ট্রেনে চড়ে ঢাকা যাব। ভাবতেই অন্য রকম থ্রিল লাগছে। পদ্মা সেতুর পর এই রেল সংযোগ আমাদের জন্য আরেক আশির্বাদ। পদ্মা সেতু চালুর পর সহজেই আমরা ঢাকা যেতে পারছি। তবে ঢাকার প্রবেশমুখে যানজটে পড়তে হয়। ট্রেন চালু হলে যানজটের কোনো ভোগান্তি থাকছে না। আরাম করে ঢাকা যাওয়া-আসা করতে পারবো আমরা। ‘
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. লিক্সন বলেন, অপেক্ষার অবসান হচ্ছে খুব শিগগিরই। ট্রেন চালু হলে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। যোগাযোগ সহজ হয়ে উঠলে উন্নয়নের গতিও বাড়বে। ট্রেন এবং এখানকার স্টেশনকে কেন্দ্র করে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে এই অঞ্চলের মানুষের। ‘
আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথে রেল চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। এর কয়েকদিন পরই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে চলাচল। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে আপাতত ৬টি ট্রেন চলাচল করবে পদ্মা সেতু দিয়ে।
রেল চালুর মধ্য দিয়ে যোগাযোগের নতুন দিগন্তে প্রবেশ করবে এই এলাকা। মাদারীপুর জেলার শিবচর থেকে রাজধানী ঢাকা এবং রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে সহজেই যেতে পারবে এই এলাকার মানুষ। রেলের আরামদায়ক ও সহজ যাতায়াতের জন্য আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা শিবচরবাসীর।
এই ওয়েবসাইটের সকল স্বত্ব madaripursomoy.com কর্তৃক সংরক্ষিত
Leave a Reply