মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি :
সাপে কামড় দেয়া রোগী শিশু নুসাইবাকে প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনাম না দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়েছে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক। এমন কি পায়ের বাধনও খুলে দিয়েছে আর এতেই মৃত্যু হয়েছে শিশু নুসাইবা অভিযোগ নুসাইবার পরিবারের।
অ্যান্টিভেনাম না দেয়ার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. মো. ফাইজুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে জানান জেলার সিভিল সার্জন। অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিচার দাবি করেছে শিশু নুসাইবার পরিবার।
নুসাইবার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নুসাইবা আক্তার, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বিয়ের ৭ বছর পর আসাদুল ফকির ও নিশি আক্তার দম্পত্তির ঘর আলো করে আসে নুসাইবা। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাবা আসাদুল নুসাইবার জন্মের ১ বছর পর পাড়ি দেন ইটালীতে। মা এবং আত্মীয়-স্বজনদের আদর ও ভালবাসায় বড় হচ্ছিল সে। বাড়ির পাশেই নানা বাড়ি। তাই যখন তখন চলে যেত নানা বাড়ি। শনিবার সকালে নানা বাড়ি যায় নুসাইবা। সেখানেই বিষাক্ত সাপ তার পা কামড়ে দেয়। সাথে সাথে নানা নানিকে বললে তারা পায়ের হাটুর উপরে একটি বান দিয়ে দ্রুত নুসাইবাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার ডা. ফাইজুর রহমান অ্যান্টিভেনম না থাকার কথা বলে তাদের দ্রুত ঢাকা অথবা ফরিদপুর নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই সাথে নুসাইবার পায়ের বাঁধন খুলে দেয় ডাক্তার। ঢাকা নেয়ার পথে শিশু নুসাইবা মারা যায়। মেয়ের ভবিষ্যত গড়ার জন্য যে বাবা মেয়েকে ছেড়ে ইটালী পাড়ি দিয়েছিল সেই বাবাকেই দেড় বছর পর মেয়ের মৃত্যুর সংবাদে বাড়ি এসে রবিবার দুপুরে সেই আদরের মেয়েকে দাফন করেতে হয়েছে। ডাক্তারের অবহেলায় মেয়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেনা বাবা আসাদুল ফকির। অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিচার চাইলেন তিনি।
নুসাইবার ফুফা মো. আজাদ খান বলেন, ডাক্তার নুসাইবার চিকিৎসা করেনি। ডাক্তার বলেছে সাপে কাটা রোগীর ইনজেকশন হাসপাতালে নাই এই রোগীর চিকিৎসা এখানে হবে না। এরপর সাপের বিষ যাতে সাড়া শরীরে ছড়িয়ে পরতে না পারে তার জন্য পায়ের উপরীভাগে আমরা যে বান দিয়েছিলাম তাও খুলে দিয়েছে। এমনকি নুসাইবাকে যারা নিয়ে গেছে তাদের সাথে ডাক্তারসহ হাসপাতালের অন্যান্যরা খুবই দুর্ব্যবহার করেছে। আমরা ডাক্তার ও যারা খারাব ব্যবহার করেছে তাদের বিচার চাই।
নুসাইবার নানা মো. আলতাব হাওলাদার বলেন, সাপে কামড় দেয়ার সাথে সাথেই আমরা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তার ও তার লোকজন আমাদের দূর, দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। নুসাইবাকে ফরিদপুর অথবা ঢাকা নিতে বলেছে। আমরা সাপে কাটার ইনজেকশনের কথা বললে হাসপাতালে ইনজেকশন না বলেছে। আমরা বাধ্য হয়ে নাতনীকে নিয়ে ঢাকা রওনা হই। ঢাকা মেডিকেলে নিলে ডাক্তাররা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নুসাইবা মারা গেছে বলে জানায়।
হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম আছে বলে জানান জেলার সিভিল সার্জন। কিন্তু কেন শিশু নুসাইবাকে ডা. মো. ফাইজুর রহমান অ্যান্টিভেনম দেয়নি তা তিনি জানেন না বলে জানান। তবে অভিযুক্ত ডাক্তার ফাইজুর রহমানকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয়ার কথা বলেন তিনি। চিকিৎসায় গাফলতির প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন সিভিল সার্জন ডা. মুনির আহমদ খান।
অভিযুক্ত ডা. ফাইজুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এই ওয়েবসাইটের সকল স্বত্ব madaripursomoy.com কর্তৃক সংরক্ষিত
Leave a Reply