ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি :

ফরিদপুরের শত বছরের পুরোনো ‘অম্বিকাপুর রেলস্টেশন’-এর নাম না পরিবর্তন করার দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে জেলা নাগরিক মঞ্চ।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদারের হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেন জেলা নাগরিক মঞ্চের সদস্যরা।

স্মারক লিপিতে বলা হয়, আমরা জানতে পেরেছি, ফরিদপুরে আমাদের শত বছরের পুরোনো অম্বিকাপুর রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করার পাঁয়তারা চলছে।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্দোলনের ফসল হিসেবে রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরের গোবিন্দপুর এলাকায় এ রেলওয়ে স্টেশনটি স্থাপন করা হয় ১৮৯৯ সালে। আর সেটা হয় জেলার কৃতি সন্তান, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও সমাজসেবী অম্বিকাচরণ মজুমদারের ঐকান্তিক চেষ্টার কারণে।  তখন এ রেল স্টেশনের নাম ছিল ‘ফরিদপুর স্টেশন’।

১৯২২ সালের ডিসেম্বরে অম্বিকাচরণ মজুমদারের মৃত্যুর পর এ রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ১৯২৩ সালে ‘অম্বিকাপুর রেল স্টেশন’ রাখা হয়। এটি করা হয়েছিল, অম্বিকাচরণ মজুমদারের স্মৃতি ধরে রাখা ও রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারিত কাজে তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে। এ কারণে স্টেশনটির নামকরণের সঙ্গে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য যেমন জড়িত, তেমনি ফরিদপুরবাসীর আবেগের বহিঃপ্রকাশও বটে।

স্মারকলিপিতে ফরিদপুরের জন্য অম্বিকাচরণ মজুমদারের বিভিন্ন কার্যক্রমের আলোকপাত করে বলা হয়, এই ফরিদপুরের জন্য তার অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি একাধিকবার জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ছিলেন ফরিদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি পৌর ভবন, রাস্তাঘাট সেতু নির্মাণ ও পৌরসভার পানির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করেন। দক্ষিণ বঙ্গের আজকের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠায় তার অবদানের কথা সর্বজনবিদিত। ১৮৮১ সালে তিনি ‘ফরিদপুর পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করেন। এটি ছিল ফরিদপুরের প্রথম কোনো রাজনৈতিক সংগঠন।

স্মারকলিপিতে দাবির সমর্থনে আরও বলা হয়, আমরা ফরিদপুরের নাগরিক সমাজ মনে করি, যে জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মর্যাদা দিতে জানে না, সে জাতি অপাংক্তেয় হিসেবে পরিগণিত হয়।

এ অবস্থায় আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য, এমন একজন মহান ব্যক্তির নামে নামাঙ্কিত অম্বিকাপুর রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই।

ফরিদপুরের নাগরিক সমাজ কোনো অবস্থাতেই এ পরিবর্তন মেনে নেবে না, গ্রহণ করবে না। ২৫ সদস্য বিশিষ্ট ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সব সদস্য এ স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন।

স্মারকলিপি দেওয়াকালে ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা ছাড়াও নাগরিক মঞ্চের সদস্য অধ্যাপক এম এ সামাদ, অধ্যাপক আলতাফ হোসেন, সৈয়দ জুনায়েদ, আনিসুর রহমান, রফিকুজ্জামান, হাসানউজ্জামান, শেখ মফিজুর রহামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।