মাদারীপুরের শিবচরে একটি মসজিদের অসাধারণ নির্মাণশৈলী, রং, লাইটিং ও এর অবস্থান মুগ্ধ করছে মুসলিস্ন ও দর্শনার্থীদের। শুক্রবার মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মসজিদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বাড়ি ফেরেন তারা।
দেশের আলোচিত পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশের দত্তপাড়া ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে নির্মিত এ মসজিদটি শুধু দর্শনার্থীদেরই নয়, সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদেরও মুগ্ধ করছে বারবার। কলেজের নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে ‘ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ মসজিদ’। দিনের আলোয় মসজিদটি এক রকম সৌন্দর্য, সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে আরেক রকম এবং রাতের অন্ধকার নামলে অন্য এক রূপে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর ই আলম চৌধুরী পারিবারিকভাবে নিজস্ব অর্থায়নে মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। মসজিদ নির্মাণ করতে প্রায় তিন বছর সময় লেগেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ হলে চলতি বছরের শুরু থেকেই মসজিদটি নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। মসজিদটির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে এর নির্মাণশৈলী, গম্বুজের কারুকাজ, ভেতরের আট পাখা বিশিষ্ট বৈদু্যতিক ফ্যান। চীন থেকে আনা ১২ ফুট দৈর্ঘ্যের এমন ফ্যান রয়েছে চারটি। যা পুরো মসজিদকে সার্বক্ষণিক শীতল রাখে। রয়েছে তুর্কি থেকে আনা ঝাড়বাতি। মসজিদটির মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ২৫ ফুট। মসজিদের চারপাশে বড় আকারের একাধিক জানালা থাকায় পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশ করতে পারে। ফলে ভেতরে সারাক্ষণ শীতল ভাব বজায় থাকে।
মসজিদে একজন ইমাম, একজন মুয়াজ্জিম ও দু’জন খাদেম রয়েছেন। ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কমিটি মসজিদের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন।
সরেজমিনে মসজিদ ঘুরে দেখা গেছে, বিকেল থেকে মসজিদ প্রাঙ্গণ দর্শনার্থীদের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে। মসজিদের সামনে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বয়স্কদেরও। বাবা-মা’র হাত ধরে শিশুদেরও দেখা গেছে ছবি তুলতে। নামাজের সময় হলে দর্শনার্থীদের নামাজ আদায় করতেও দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর মসজিদের লাইট জ্বালানো হলে অদ্ভুত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। সন্ধ্যার পর মসজিদ ও মহাসড়কে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মূলত বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে মসজিদ প্রাঙ্গণে।
ভাঙ্গা থেকে আসা আব্দুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ মসজিদটি দেখে চোখ আটকে যায়। বাসে বসে এক মুহূর্তের জন্য দেখেছিলাম। এখন সময় নিয়ে দেখতে এসেছি।
দ্বিতীয়খন্ড এলাকা থেকে আসা আলমগীর বলেন, একদিকে দৃষ্টিনন্দন প্রশস্ত মহাসড়ক। তার ঠিক পাশেই দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। অসাধারণ সৌন্দর্য!
দত্তপাড়া টিএন একাডেমির সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওহাব মিয়া বলেন, ‘আমরা চিফ হুইপ মহোদয়ের কাছে একটি মসজিদ চেয়েছিলাম। তিনি এত চমৎকার করে একটি মসজিদ তৈরি করে দেবেন, এমনটা ভাবনায় ছিল না। আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত এ রকম চমৎকার নির্মাণশৈলীর মসজিদ পেয়ে। ‘
মসজিদ নির্মাণকাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা পিটার খান বলেন, মসজিদটির অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি উলেস্নখযোগ্য বিষয় হলো চিফ হুইপ নির্মাণশৈলী থেকে শুরু করে জানালার নেট পর্যন্ত নিজের পছন্দ অনুযায়ী করেছেন। মসজিদটির স্থাপত্য নকশা করেছেন কাজী মোহাম্মদ হানিফ। তিনি বায়তুল মোকাররমের এক্সটেনশনের ডিজাইনসহ দেশের অসংখ্য মসজিদের ডিজাইন করেছেন। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মসজিদটি উচ্চতায় প্রায় সাড়ে ১২ ফুট। এতে সড়ক থেকে মসজিদটি দেখতে চমৎকার লাগে।
তিনি আরও বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে মসজিদের চারপাশ। একদিকে এক্সপ্রেসওয়ে, অন্যদিকে তার ঠিক পাশেই অনন্য নির্মাণশৈলীর মসজিদ, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের নজর কেড়েছে। দিন দিন মসজিদ ঘিরে বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভিড়।
এই ওয়েবসাইটের সকল স্বত্ব madaripursomoy.com কর্তৃক সংরক্ষিত
Leave a Reply